জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ, মৃত্যুই সেখানে শেষ কথা নয়..."

 এই চট্টলায় ঝলমলে আলোর ঝলকানির আড়ালে পাদপ্রদীপের মিটমিটে আলোর মতো বিস্মৃত এক নাম মৌলভী সৈয়দ আহমদ। যিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চট্টগ্রাম অঞ্চলের গেরিলা কমান্ডার। এই দুঃসাহসী যোদ্ধা পাকিস্তানি আর্মির ভিত নাড়িয়ে দেওয়া, পুরো বিশ্বের চোখে তাক লাগিয়ে দেয়া যে দুর্ধর্ষ "অপারেশন জ্যাকপট", তার বেইজ কমান্ডার ছিলেন। এই সফল অভিযান পুরো পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলোর কাছেও এক বিস্ময়ের নাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই ঘনঘোর অন্ধকারের সেই সর্পিল ছোবল উপেক্ষা করে রাজপথে ফেঁটে পড়েছিলেন প্রতিবাদে, বিক্ষোভে। যার ফলশ্রুতিতে এই সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম কিংবদন্তীতুল্য নায়ক'কে ঘাতকেরা দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে হত্যা করে আজকের এই দিনে। (১১ই আগস্ট)


মৃত্যুঞ্জয়ী যার প্রাণ তাকে আটকাবে কার সাধ্য? তাইতো এখনো ইতিহাসের বাঁকে মৌলভী সৈয়দ এক জ্বলজ্বলে নক্ষত্র। দেশমাতৃকার চেয়ে মৃত্যু তাদের কাছে তুচ্ছ বিষয়, যেমন'টা তুচ্ছ করেছিলো আঠারো বছর বয়েসী ক্ষুধিরাম। কলের বোমা ছুঁড়ে মেরেছিলেন লাট সাহেবের গাড়ী'তে। যাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছা কি, তিনি উত্তরে বললেন... 


"আমি ভালো বোমা বানাতে পারি, মৃত্যুর আগে তা ভারতবাসী কে শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই "


কতটুকু দেশপ্রেম থাকলে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও এমন কথাগুলো বলা যায়? মাত্র আঠারো বছর বয়সে হাসি মুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা যায়? একবার ভাবুন তো! এই তরুণ কে নিয়ে পীতাম্বর দাস বাউল তাই যথার্থই বলেছিলেন গানে গানে... 


"একবার যেতে দে মা ঘুরে আসি

হাসি হাসি পরবো ফাঁসি, দেখবে জগৎবাসী"


যুগ থেকে যুগে মুক্তিকামী মানুষের মাঝে আজও যেমন বেঁচে আছে ক্ষুদিরাম, তেমনি বেঁচে থাকবেন মৌলভী সৈয়দও। 


কারন "জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ, মৃত্যুই সেখানে শেষ কথা নয়..."


মৃত্যুদিবসে তাদের স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়।

Post a Comment

0 Comments