এক অদম্য বাংলাদেশের গল্প

ছবি সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ পরেই দক্ষিণ কোরিয়ার দিল্লিস্থ মিশনের একজন জুনিয়র অফিসারকে ঢাকায় পাঠানো হলো পরিস্থিতি দেখার জন্য। তেজগাঁও এ নেমে ধংসস্তুপ ঠেলে তিনি রিক্সায় চেপে নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসলেন।

এশিয়া বিভাগের একজন কর্মকর্তার সাথে বৈঠক শেষে তার নাম আর ঢাকার  টেলিফোন নাম্বারটা চাইলেন। স্বাভাবিক কারণেই কোন কার্ড ছিলোনা।

পররাষ্ট্র  মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা সযত্নে টেবিলের একপাশে রাখা একটা A4 সাইজের কাগজ সাবধানে হাতে তুলে নিয়ে তার এক কোনায় যত ছোট করে নাম আর টেলিফোন নাম্বার লেখা যায় তা লিখে শুধু সেই অংশটুকু সাবধানে ছিঁড়ে কোরিয়ান ব্যক্তিটিকে দিলেন।

ধংসস্তুপের মধ্যে দিয়ে রিক্সায় আবার ফিরতে ফিরতে সেইদিন তিনি ভেবেছিলেন সেই সামান্য একটা সাদা কাগজ বাঁচানোর চেষ্টার কথা এবং নিশ্চিত হয়েছিলেন এই জাতি একসময় নিজের পায়ে দাঁড়াবেই।

১৯৭৩ এ আবার তিনি এসেছিলেন দিল্লিস্থ কোরিয়ার অ্যাম্বাসেডরকে নিয়ে ঢাকায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে। চুক্তি সাক্ষরের সময় তার অ্যাম্বাসেডরের কলমটা কাজ করছিলোনা, সেই তরুণ কোরিয়ান কর্মকর্তা তার কলমটি এগিয়ে দিয়েছিলেন সাক্ষর করার জন্য। খুব সযত্নে সেই কলমটি এখনও সংরক্ষণে রেখেছেন তিনি।

কেন?  জানতে চাইলাম খাবার টেবিলে। উত্তর আসলো, ১৯৭২ এর প্রথম সফর তাকে প্রচন্ড নাড়া দিয়েছিলো। আর নতুন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষণের সাক্ষী হয়ে থাকার অভিজ্ঞতা তো একজন কূটনীতিকের জীবনে বারবার আসে না।

১৯৭২ এর সেই তরুণ কূটনীতিক আজকের জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। জেনেভায় দুপুরের খাবার টেবিলে তার এই স্মৃতিচারণ।

বান কি মুন জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিব। 

এই কথাটা গতবছর নিজের ফেইসবুক পোস্টে বর্ণনা করেছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম। পাঠকদের জন্য আমরা আবারো তুলে ধরলাম। আমাদের সম্পর্কে যখন কোন বিদেশী এমন পর্যবেক্ষণ দেয় তা খুবই অনুপ্রেরণা যোগায়।

বান কি মুন জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিব ছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার  অধিবাসীরূপে তিনিই দ্বিতীয় এশীয় নাগরিক যিনি কিনা জাতিসংঘের মহাসচিব হয়েছিলেন। এক অদম্য বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এখনো যার চোখে লেগে আছে।

ছবি সংগৃহীত
 
এই বাংলাদেশ হার না মানার, লড়ে যাওয়ার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার গল্প লেখে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। কবি সুকান্তের ভাষায় বলা যায়...

'এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়ঃ
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়'।

Post a Comment

0 Comments