নাসির আলী মামুন একবার তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। এই সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয় ‘আহমদ ছফার সময়’ বইটিতে। সেখানে তিনি বলেছিলেন...
“একটা মানুষের মধ্যেই গোঁজামিল থাকে। কিন্তু যে সাপ সে হান্ড্রেড পারসেন্ট সাপ। যে শেয়াল সে হান্ড্রেড পার্সেন্ট শেয়াল। মানুষ সাপও হইতে পারে, শেয়ালও হইতে পারে, পাখিও হইতে পারে। মানুষেরই বিভিন্ন চরিত্র নেয়ার ক্ষমতা আছে। বুঝছো, গ্রাম দেশে আগে সাপ আর শেয়াল পাওয়া যাইতো। এগুলা নাই এখন। কারণ সাপ, শেয়াল এরা মানুষ হিসাবে জন্মাইতে আরম্ভ করছে”।
তার দার্শনিক চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন দেখা যায় তার লেখাগুলোতে এবং জীবনযাপনে। চিরাচরিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যাবস্থার ঘটবাধা নিয়ম তিনি উপেক্ষা করে চলেছিলেন জীবনভর। এ কারনেই নিজস্ব বিশ্বাস ও মতবাদকেও বারবার ঝালাই করতে দেখা যায় তার চরিত্রে। আহমদ ছফা প্রথাবিরোধী ও অকপট মনোভাবের জন্য আলোচিত ছিলেন বেশী৷
একবার তিনি ক্ষুধা নিয়ে গল্প লিখবেন বলে ঠিক করলেন। ক্ষুধার ব্যথা কেমন তা অনুভব করার জন্য সারাদিন ছিলেন না খেয়ে। এভাবে না খেয়ে ঘুরাঘুরি করতে করতে একসময় রাত আটটার দিকে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। ভাবুনতো কতোটা বড় মাপের লেখক হলে গল্প লেখার জন্য গল্পটাকে আগে নিজে ধারণ করতে পারে।
তাঁকে সাহিত্যিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে আমাদের কালের এক চিন্তানায়কের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
"মাটির মানুষের জগতে হিংস্রতা এবং হানাহানি দেখে আকাশের পাখির জগতে আমি আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানেও হিংস্রতা এবং জাতি বৈরিতার প্রকোপ দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং, মানুষের কর্তব্য পালন করার জন্য আমার মানুষের কাছে ফিরে না গিয়ে উপায় কী? আমি বৃক্ষ নয়, পাখি নয়, মানুষ। ভালো হোক, মন্দ হোক, আনন্দের হোক, বেদনার হোক আমাকে মানুষের মতো মানুষের সমাজে মনুষ্যজীবনই যাপন করতে হবে।"
চট্টগ্রামের চন্দনাইশের গাছবাড়ীয়া গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া আহমদ ছফা বাংলাদেশের অন্যতম একজন মনীষী লেখক।
এই গুণীর মহাপ্রয়াণ দিবসে জানায় গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি.....
0 Comments