একুশের সংগ্রামে চট্টগ্রাম


৮ই ফাগুনে যে আগুন লেগেছিলো ঢাকায়, তার স্ফুলিঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছিলো চট্টগ্রামও। ঢাকায় গুলি বর্ষণের সংবাদ চট্টগ্রামে পৌঁছালেই বিকেলে লালদিঘী মাঠে আয়োজন করা হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। রাতেই লালদিঘী মাঠের পশ্চিম পাশে যেখানটায় এখন পেট্রোল পাম্প আছে সেখানে একটি শহীদ মিনার তৈরী করা হয়। তবে পরের দিনই নাকি পুলিশ এসে শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে দেয় এমন শোনা যায়।

এই ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া না গেলেও, এই আন্দোলনে চট্টগ্রামের রাজপথ যে তপ্ত অনলে পরিণত হয়ে টানা এক সপ্তাহেরও বেশী প্রতিবাদে উত্তাল ছিলো তার প্রমাণ পাওয়া যায় রাউজান উপজেলার মহামুনী পহাড়তলী গ্রামের কন্যা একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দির বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে।

ওদিকে জলবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে এনায়েত বাজার ছগীর ম্যানশনে মামার বাসায় শুয়ে থাকা আরেক চট্টলার সূর্যসন্তান কবি ও সাংবাদিক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর কানে ঢাকায় গুলি বর্ষণের ঘটনা পৌঁছালে রাগে ও ক্ষোভে তার কলম হয়ে গিয়েছিলো বারুদে ভরা মেশিনগান। আন্দরকিল্লা কোহিনূর প্রেসে গিয়ে থর থর শব্দে ফাটতে শুরু করলো একেকটি শব্দ। "কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি" শিরোনামে একুশের প্রথম কবিতাটি জানান দিলো চট্টগ্রাম জেগে আছে।

কবিতাটি ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় লালদীঘি ময়দানের বিশাল জনসভায় চৌধুরী হারুন-অর-রশীদ পাঠ করে শোনান। সে কবিতাটির অনেক গুলো কপি কোহিনূর প্রেস থেকে ছাপিয়ে এনে উপস্থিত জনতার মাঝে বিলি করা হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শহর স্বাক্ষী হয় আরেকটি নতুন ইতিহাসের, শেকড় বাঁচাতে শেকল ভেঙ্গে সেদিন স্বতন্ত্র মিছিল বের করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা। চট্টগ্রাম কলেজ ও স্থানীয় মহিলা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা লরি ও বাসে করে ‘মন্ত্রিসভার পদত্যাগ চাই’,  ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ সহ নানান স্লোগান দিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে প্রদক্ষিণ করে। চট্টগ্রামের ইতিহাসে রাজপথে নেমে প্রকাশ্যে নারীসমাজের এ ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শন ছিলো এটাই প্রথম।

এতোটুকু যারা পড়ে এসেছেন তারা কি ভাবছেন ঢাকায় আন্দোলনের পরই জেগেছিলো চট্টগ্রাম...? না তেমনটি হয়নি! কারন চট্টগ্রাম তখনো এগিয়ে থাকতো পুরো ভারতবর্ষের চেয়ে বেশী।

তাইতো পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র সতেরো দিনের মাথায় চট্টগ্রামের আরেক সন্তান একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবুল কাশেম ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন “তমদ্দুন মজলিস” নামের সংগঠন। আর সেই সংগঠনের হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর তারা প্রকাশ করেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম ঐতিহাসিক দলিল “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু” নামক পুস্তিকা।

১৯৪৭ এর ৬ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সর্বপ্রথম ঢাকাতে যে ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো সেটির সভাপতিত্বও করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক আবুল কাশেম।

#ভাষা_আন্দোলনে_চট্টগ্রাম 

#একুশের_সংগ্রামে_চট্টগ্রাম

Post a Comment

0 Comments