শেখ ফরিদ গঞ্জেশকর বা চিনির আকর।

ছবিঃ শেখ ফরিদ (রঃ) চশমা জামে মসজিদ। 

তিনি শৈশবে তাঁর বাবাকে হারান। পুণ্যাত্মা মা তাঁকে লেখাপড়া করানো এবং ধর্মে অনুরক্ত করার ব্যাপারে তৎপর ছিলেন। ছেলে যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নিয়মিত নামাজ আদায় করে সেজন্য তাঁর মা জায়নামাজের নীচে চিনির পুরিয়া রেখে দিতেন। বালক শেখ ফরিদ চিনির লোভে এক ওয়াক্ত নামাজও কাযা করতেন না। একদিন তাঁর মা ভুলবশত জায়নামাজের নীচে চিনির পুরিয়া রাখতে ভুলে যান। তাঁর মা তাঁকে নামাজ আদায় করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেন “আমি যথাসময়ে নামাজ আদায় করেছি এবং জায়নামাজের নীচে চিনির পুরিয়া পেয়েছি।” ছেলের হাতে চিনির পুরিয়া দেখে তাঁর মা অবাক হয়ে যান এবং বুঝতে পারেন যে তাঁর ছেলে আল্লাহর কাছ থেকে গায়েবী সাহায্য পেয়েছেন। সেই দিন থেকেই তাঁর মা তাঁকে গঞ্জেশকর বা চিনির আকর বলে ডাকতে শুরু করেন।

হযরত শেখ ফরিদ গঞ্জেশকর (রহ) মায়ের আদেশে দীর্ঘ ৩৬ বছর যাবত্ কঠোর সাধনায় মগ্ন ছিলেন। এই দীর্ঘ ৩৬ বছর দুনিয়ার কোন কিছুর সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল না। কথিত আছে, তিনি যে স্থানে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সাধনায় মগ্ন ছিলেন সে স্থানে আল্লাহর ইচ্ছায় ঝর্ণার সৃষ্টি হয়। সেই ঝর্ণা থেকে এখনো পর্যন্ত অনবরত পানি নির্গত হচ্ছে। এই ঝর্ণাটির নাম দেয়া হয়েছে শেখ ফরিদের চশমা। শত শত বছর ধরে এই ঝর্ণার পানি জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবার কাছে অতি পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই ঝর্ণার পানি নেয়ার জন্য প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ আসতেন। চট্টগ্রামের অতীত ইতিহাসের সমৃদ্ধ সম্পন্ন এই স্থানটিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দর্শনীয় স্থানের রূপ দিয়েছেন।
ছবিঃ চশমা কূপের বর্তামান অবস্হা। 

হযরত শেখ ফরিদ গঞ্জেশকর (রহ) তাঁর দীর্ঘ জীবনে আল্লাহর সাধনা এবং মানব সেবা করে পরিণত বয়সে ৬৬৬ হিজরীতে দিল্লীতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি অসিয়ত করে যান যে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে যেনো তাঁরই প্রিয় শিষ্য হযরত নিজাম উদ্দীন আউলিয়া (রহ) এর আস্তানায় দাফন করা হয়। উল্লেখ্য নিজামুদ্দিন আউলিয়া শেখ ফরিদউদ্দিনের শিষ্য ছিলেন। বাবা ফরিদ তাঁকে নিজের খলিফা  হিসেবে মনোনিত করেছিলেন।

Post a Comment

0 Comments