দুর্গতিনাশিনী দূর্গা মর্ত্যে আসেন অসুরদের বধে, ভক্তদের রক্ষায়।


বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গার পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় রয়েছে চণ্ডীর উদ্ভবস্থান বলে খ্যাত মেধা মুনির আশ্রম। এ আশ্রম থেকেই সর্বপ্রথম তৎকালীন ভারতীয় উপ-মহাদেশ সহ সারা বিশ্বে দুর্গা পূজার প্রচলন হয়েছে বলে কিংবদন্তী রয়েছে।
ছবিঃ সংগ্রহিত 

দুর্গা ও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যতগুলি পৌরাণিক গল্প প্রচলিত আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পটি পাওয়া যায় শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্-এ। এই গল্পটি হিন্দুরা এতটাই মান্য করে যে শ্রীশ্রীচণ্ডীর পাঠ দুর্গাপূজার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। দেবীমাহাত্ম্যম্ আসলে মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর একটি নির্বাচিত অংশ। এতে তেরোটি অধ্যায়ে মোট সাতশোটি শ্লোক আছে। এই বইতে দুর্গাকে নিয়ে প্রচলিত তিনটি গল্প ও দুর্গাপূজা প্রচলনের একটি গল্প রয়েছে। এর একটি হল রাজা সুরথের কাহিনী।
ছবিঃ সংগ্রহিত 

রাজা সুরথের গল্পটি শ্রীশ্রীচণ্ডী-র প্রধান তিনটি গল্পের অবতরণিকা ও যোগসূত্র। সুরথ ছিলেন পৃথিবীর রাজা। সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে তাঁর যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। কিন্তু একবার এক যুদ্ধে এক যবন জাতির হাতে তাঁর পরাজয় ঘটে। সেই সুযোগে তাঁর মন্ত্রী ও সভাসদেরা তাঁর ধনসম্পদ ও সেনাবাহিনীর দখল নেন। সুরথ মনের দুঃখে বনে চলে আসেন। বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধা নামে এক ঋষির আশ্রমে এসে উপস্থিত হন। এই মেধা ঋষির আশ্রমই আজকের কড়লডেঙ্গার মেধা মুনি আশ্রম।

মেধা ঋষির কাছে দেবী মাহাত্ম্য অবগত হয়ে তাঁরা দেবীর পূজা করেন এবং সে পূজায় দেবীকে প্রসন্ন করে মনষ্কামনা পূর্ণ করেন। মেধা ঋষি বর্ণিত ও মার্কন্ডেয় কর্তৃক পুনরুজ্জীবিত চন্ডীর অর্চনা প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় প্রচলিত ছিল। রাজা সুরথ ঋষি মেধার নির্দেশে বসন্তকালে দেবী দূর্গার পূজা করেছিলেন বলে তা বাসন্তী পূজা নামে খ্যাতি পায়।

সত্যযুগে শ্রীরামচন্দ্র যুদ্ধে বিজয় লাভের জন্য শরৎকালে অকাল বোধনের মাধ্যমে দেবী দূর্গাকে মর্তে আনেন। দেবীকে প্রসন্ন করে লঙ্কার রাজা রাক্ষসরাজ রাবণকে পরাজিত করেন। রামচন্দ্রের এই  দূর্গা পূজার মধ্য দিয়ে এশিয়া উপমহাদেশে শরৎকালের দেবী পূজার প্রচলন ঘটে। কালক্রমে তা পূজার মধ্যে সীমিত না থেকে বাঙালির দুর্গোৎসব হয়ে উঠে।

- ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক,
-  উ-কার বিঘ্ননাশক,
-  ‘রেফ’ রোগনাশক,
-  ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও
-  অ-কার ভয়-শত্রুনাশক।

অর্থাৎ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।

অন্যদিকে সংস্কৃত অভিধান শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, “দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা” – অর্থাৎ, দুর্গ নামক অসুরকে যিনি বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা। আবার শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে এই দেবীই ‘নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ’ বা সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি।

দুর্গতিনাশিনী দূর্গা মর্ত্যে আসেন অসুরদের বধে, ভক্তদের রক্ষায়। সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদের টুঁটি চেপে ধরে এই দূর্গা পূজা সারা বাংলায় বয়ে আনুক সম্প্রতির সুর সেই কামনা রইলো।

Post a Comment

0 Comments