নভেরা আহমেদ বাংলাদেশের আধুনিক ভাষ্কর্য শিল্পের পথিকৃৎ।

গুগল ডুডলও করেছে তার জন্যে।

সে বড় অভিমানী মেয়ে। জীবনানন্দের ভাষায় বলা যায় " এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর"। জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৯শে মার্চ। পৈত্রিক সূত্রে চট্টগ্রামের মেয়েটি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থীও ছিলো। চট্টগ্রাম কলেজে পড়ালেখা করাকালীন সময়ে ছিলেন আসকার দীঘির পৈত্রিক বাড়ীতে। তবে পিতার চাকরির সুবাদে তার জন্ম হয়েছিলো সুন্দরবনে। তার চাচা নাম রেখেছিলেন "নভেরা" ফারসি এই শব্দটির অর্থ হল “নবাগত বা নতুন জন্ম”। এই নামের যথার্থ প্রমানও তিনি রেখেছিলেন তার কাজের মধ্য দিয়ে। আজ গুগল ডুডলও করেছে তার জন্যে।

তিনি বাংলাদেশের আধুনিক ভাষ্কর্য শিল্পের পথিকৃৎ। ১৯৬০ সালে নভেরার এক প্রদর্শনীর পুস্তিকায় শিল্পাচার্য জয়নুল তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আজ এখানে নভেরা যা করছেন, তা বুঝতে আমাদের অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।’ অপেক্ষা আমাদের করতে হয়েছে সত্য, তবু তাকে আমরা আগলে রাখতে পারিনি।

নভেরা আহমেদের প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তি হয় ১৯৬১ সালে, অল পাকিস্তান পেইন্টিং এন্ড স্কাল্পচার এক্সিবিশনে। সেখানে তিনি “চাইল্ড ফিলসফার” ভাস্কর্যের জন্য প্রথম পুরষ্কার পান ।এই “চাইল্ড ফিলসফার” ভাস্কর্যটি বানানো হয়েছিল বাড়িতে কাজে সাহায্যকারী দশ বছরের একটি বালককে মডেল হিসেবে ধরে নিয়ে। সেই এক্সিবিশনে এই ভাস্কর্যটিই প্রথম পুরস্কার লাভ করে। ১৯৯৭ সালে পেয়েছিলেন "একুশে পদক" সেটি নিতেও তিনি দেশে আসেননি।

খুব বেশী দুঃখ পেয়েছিলেন তার নিজ দেশ আর সমাজের কাছ থেকে। পারিবারিক এবং সামাজিক রক্ষণশীলতার কারনে নভেরা ১৯৭৩ সালে পারী জমান প্যারিসে। সেখানেই নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। শোনা যায় সেখানেও কোন বাঙালির সাথে খুব একটা মিশতেন না তিনি। শিল্পি শাহাবুদ্দিনের সাথে তার যখন দেখা হয় ফ্রান্সে ২০১৪ সালে, তখন একবার দেশে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন তার সৃষ্টি শহীদ মিনারের বেদীতে কিছু সময় বসবেন। কিন্তু ততোদিনে আমরা সকলেই ভুলে গিয়েছিলাম নভেরা নামে কেউ আমাদের ছিলো, কিংবা আছে। ২০১৫ সালে তার মৃত্যুর পর আবার আলোচনায় আসে নভেরা। যেনো রবীন্দ্রনাথের "কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই"।


চট্টগ্রামের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে তার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে কোন স্মৃতি স্মারক নির্মাণ করার।

Post a Comment

0 Comments