ছবি সংগৃহিত
সেই ছেলের হত্যাকারী শকুনেরা যখন জাতীর পতাকা খামচে ধরে পুনরায়। তখন তিনি আর চুপ করে থাকতে পারেননি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুলে নতুন করে বাংলাদেশীদের মধ্যে গণজাগরণের সৃষ্টি করেছিলেন।
নিজের সহযোদ্ধাদের তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমি হলাম শুকনো ঘাসের মত। যখন বৃষ্টির সংস্পর্শে আসি, তখন আমি সবুজ হয়ে উঠি। তোমরা সকলে আমার কাছে বৃষ্টির মত। তোমাদের তেজোদ্দীপ্ত মনোভাব আমাকে জাগিয়ে তোলে।” জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়ে গেছেন স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্নত রাখতে।
মৃত্যুশয্যায়ও তিনি বাংলাদেশের জনগনের প্রতি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার শত্রুদের বিচার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য আহবান জানিয়ে নিচের চিঠিটি লিখেছিলেন....
সহযোদ্ধা দেশবাসীগন,
আপনারা গত তিন বছর ধরে একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরূদ্ধে লড়াই করে আসছেন। এই লড়াইয়ে আপনারা দেশবাসি অভূতপূর্ব ঐক্যবদ্ধতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনের শুরুতে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। আমাদের অঙ্গীকার ছিল লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ রাজপথ ছেড়ে যাব না। মরণ ব্যাধি ক্যান্সার আমাকে শেষ কামড় দিয়েছে। আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি। রাজপথ ছেড়ে যাইনি।
মৃত্যুর পথে বাধা দেবার ক্ষমতা কারো নেই। তাই আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি এবং অঙ্গীকার পালনের কথা আরেকবার আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। আপনারা আপনাদের অঙ্গীকার ও ওয়াদা পূরণ করবেন। আন্দোলনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে থাকবেন। আমি না থাকলেও আপনারা আমার সন্তান- সন্ততিরা আপনাদের উত্তরসূরিরা সোনার বাংলায় থাকবেন।এই আন্দোলনকে এখনো দুস্তর পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র ও যুব শক্তি, নারী সমাজসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই লড়াইয়ে আছে। তবু আমি জানি জনগণের মত বিশ্বস্ত আর কেউ নয়। জনগণই সকল শক্তির উৎস। তাই একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী বিরোধী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ‘৭১- এর ঘাতক দালাল নির্মূল সমন্বয় আন্দোলনের দায়িত্বভার আমি আপনাদের বাংলাদেশের জনগনের হাতে অর্পণ করলাম। জয় আমাদের হবেই।
(জাহানারা ইমাম)
আজকের দিনে দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার লড়াই থেমেছিলো, কিন্তু তার বুনে যাওয়া বীজে আজো লাল পলাশের মতো লাখো তরুণের বুকে জ্বলজ্বলে চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ, মানচিত্র।
বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মা....♥♥
0 Comments