চট্টগ্রামের চাটগছার আন্দরকিল্লার সাথে মোঘলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের কাহিনী সম্পর্কিত। এই কিল্লা বা কেল্লায় মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিলো। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁ'র ছেলে উমেদ খাঁ এই আন্দরকিল্লার অন্দরে বা ভিতরে প্রবেশ করলে এর নাম হয়ে যায় "আন্দরকিল্লা"। চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে এখানে নির্মাণ করেন "আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ"। আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ প্রার্থণালয় হিসেবে গড়ে ওঠার কারণে আন্দরকিল্লা ক্রমান্বয়ে জনঅধ্যুষিত এলাকা হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে।
বৃটিশরা চট্টগ্রাম দখল করার পর যখন আন্দরকিল্লা জামে মসজিদকে অস্ত্রাগারে পরিণত করে ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তখন চট্টগ্রামের কৃতি পুরুষ সন্দ্বীপ নিবাসী ঐতিহাসিক হামিদুল্লাহ খাঁন ছিলেন ডেপুটি কালেক্টর। তিনি একটি প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর দাবী ছিলো এটি মুসলমানদের নামাজের জায়গা, মুসলমানদের ফিরিয়ে দেয়া হোক। তাঁর আন্দোলনের ফলে মুক্ত হয় আন্দরকিল্লাহ জামে মসজিদ।
তাঁর নামে খাতুনগঞ্জে একটি মসজিদ এবং বাজারের অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান। হামিদুল্লাহ খাঁন জামে মসজিদ এবং হামিদুল্লাহ খাঁর বাজার তাঁরই নামানুসারে কালের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
উল্লেখ্য, আন্দরকিল্লা মসজিদটি নির্মাণের কৌশলগত দিক থেকে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের প্রায় প্রতিচ্ছবি হওয়ায় এটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুসলিম স্থাপত্য বিকাশের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রার জন্ম দেয়। এই মসজিদটি দিল্লি জামে মসজিদের আদলে বড় বড় পাথর ব্যবহার করে নির্মিত বলে এই মসজিদকে পাথরের মসজিদ-"জামে সঙ্গীন"ও বলা হয়ে থাকে।
মসজিদের মূল ইমারতের প্রবেশপথে কালো পাথরের গায়ে খোদাইকৃত সাদা অক্ষরে লেখা ফার্সি লিপির বঙ্গানুবাদ যা দাঁড়ায় তা হলঃ
"হে জ্ঞানী, তুমি জগতবাসীকে বলে দাও, আজ এ দুনিয়ায় ২য় কাবা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার প্রতিষ্ঠাকাল ১০৭৮ হিজরি(১৭৬৬ সাল)। "
এই শিলালিপি থেকে এর প্রতিষ্ঠাতার নামও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, এই মসজিদে পাওয়া সকল শিলালিপির সাথে সিরিয়ার "রাক্কা নগর"-এর স্থাপত্যকলার মিল পাওয়া যায়।
0 Comments