রবীন্দ্রনাথ বাংলা ও বাঙালির....


কবি গুরু বাঙালির জীবনে যৌবনে, প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে স্থান করে নিয়েছেন বার বার। ইতিহাসের গতিধারায় এক আলোকিত সূর্যপ্রদীপ তিনি। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন যখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চট্টগ্রামে আসেন। এই সময়কালে চট্টগ্রামে ধীরে ধীরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীজ বুনতে শুরু করেছিলো।

কবিগুরু যখন চট্টগ্রামে আসেন তখন তার সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন ভাইপো সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বন্ধু কেদারনাথ দাশগুপ্ত।
‘রবীন্দ্র ভুবনে বাংলাদেশ’ এ উল্লেখ আছে, রবীন্দ্রনাথের আগমন উপলক্ষে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে ত্রিপুরাচরণ চৌধুরী ও কাজেম আলী মাস্টার প্রমুখের উদ্যোগে রেল স্টেশনটি ফুল ও পাতা দিয়ে সাজানো হয়।
১৯০৭ সালের ১৮ জুন মঙ্গলবার সকালে কবি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে শহর দেখতে বের হন এবং কর্ণফুলী নদীর তীরে জাহাজঘাটেও যান। ‘হাজার বছরের চট্টগ্রাম’ গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। ওইদিন বিকেলে নগরীর সদরঘাট এলাকায় কমলবাবুর থিয়েটার হলে রবীন্দ্রনাথের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

কমলাকান্ত সেনের বাড়িতে তিনি আতিথ্য গ্রহণ করেন। সদরঘাটের লায়ন সিনেমা হলের (বর্তমানে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে) মালিক ছিলেন কমলাকান্ত সেন। এটি ঐ সময় কমলাবাবুর থিয়েটার নামে পরিচিত ছিলো। কমলাবাবুর থিয়েটারেই কবিগুরুকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।। কবিগুরুর আগমনে চট্টগ্রামে বুদ্ধিভিত্তিক সমাজের জাগরণ আরো এক ধাপ এগিয়ে যায়।
এছাড়া পাকিস্তান শাসনামলেও কবিগুরুর গানকে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীরা নিষিদ্ধ করলে বাঙালির অস্তিত্বে স্থান করে নেন তিনি। এমন প্রচেষ্টা বার বার চললেও বাঙালির অন্তর থেকে তাকে মুছে দেওয়া কখনোই সম্ভব হয়নি।

তাই হুমায়ুন আজাদ তার 'জলপাই রঙের অন্ধকার' গ্রন্থে লিখেছিলেন....
“ রবীন্দ্রনাথ, যাঁকে বাতিলের চেষ্টা করে আসছে নষ্টরা পবিত্র পাকিস্তানের কাল থেকে; পেরে ওঠেনি। এমনই প্রতিভা ওই কবির, তাঁকে বেতার থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয় জুড়ে বাজেন; তাঁকে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয়ের কাব্যগ্রন্থে মুদ্রিত হয়ে যান; তাঁকে বঙ্গভবন থেকে বাদ দেয়া হলে তিনি সমগ্র বঙ্গদেশ দখল করেন; তাঁর একটি সঙ্গীত নিষিদ্ধ হ'লে তিনি জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠেন।

প্রতিক্রিয়াশীল নষ্টরা অনেক লড়াই করেছে তাঁর সাথে, পেরে ওঠে নি; তাঁকে মাটি থেকে বহিষ্কার করা হ'লে তিনি আকাশ হয়ে ওঠেন; জীবন থেকে তাঁকে নির্বাসিত করা হ'লে তিনি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন জাতির স্বপ্নলোকে। নষ্টরা তাঁকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে আপ্রাণ। যদিও তিনি জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, তবুও তিনি জাতীয় কবি নন; তাঁর নামে ঢাকায় একটি রাস্তাও নেই; সংস্থা তো নেই।

তাতে কিছু যায় আসেনি তাঁর; দশকে দশকে বহু একনায়ক মিশে যাবে মাটিতে, তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙলায় ও বিশ্বে। ওই মহান কবির সাথে লড়াইয়ে না পেরে জয়ের বিপরীত পথ বের করেছে নষ্টরা। ... পীড়ন করেছে কবির আত্মাকে, দূষিত করেছে বাঙলার শুদ্ধতম সৌন্দর্যকে। ”

যদিও ইংরেজি পঞ্জিকা অনুযায়ী তার মৃত্যু দিবস ৭ই আগস্ট। এরশাদ সরকারের আমলে বাংলা পঞ্জিকা পরিবর্তনের ফলে কবিগুরুর জন্ম ও মৃত্যু দিবস দুই বাংলা একদিন আগে ও পরর পালন করে থাকে।

তবুও যুগে যুগে তিনি বাঙালি সমাজকে জ্বলজ্বলে তারার মতো নাবিকের পথ দেখিয়ে চলবেন।

বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি তাকে।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারেন্ট 

Post a Comment

0 Comments